Thursday, September 15, 2016
জানালা
দুইদিন আগেই পূর্ণিমা চলে গেছে, তবু আকাশের চাঁদটা যেন তার রূপ আরও বেশ কয়েকদিন ধরে রাখতে চায়। মনে হয়, ভুলে গেছে, সে নিজেই দায়বদ্ধ। এদিকে নতুন আবাস পেয়ে ব্যাঙরাও বুঝি নতুন নতুন সুর উদ্ভাবন করে গেয়ে চলেছে রাত-দিন - হয়তো এ শুধু সঙ্গীকে পাওয়ার গান নয়। আমাদের সাথে থাকতে থাকতে ওরাও বুঝি মৃত্যু-ধাতু সংগীত গাইতে শিখে গেছে। কে তা জানে।... টেবিলের পাশে খাট, খাটের পাশে বড় একটা সেকেলে জানালা। খিড়কি দিয়ে দেখলেও, দুপাল্লা খুলে দেখলেও, ওপাশের দৃশ্যটা অচেনাই মনে হয়। একসময় যেখানে ছিল একশ বছর পুরোনো দালানকোঠা, যার দেয়ালের চুন-সুড়কির পরতের পেছনে লুকিয়ে থাকা ইটগুলো আজও বুঝি কত গল্প বলতো - কিন্তু সব আজ উধাও। জানালা দিয়ে তাকালে শুধু ধূধূ প্রান্তর চোখে পড়ে। না, এখানে মোটা-চিকন কোনো কেউই পড়ে নি। যা হয়েছে উন্নয়নের জন্য হয়েছে। আমার বাড়িটাও এই উন্নতিতে সাহায্য করেছে। তার এক পাশ ছিঁড়ে নিয়েছে তারা। সেই ধ্বংসস্তুপ, থুক্কু, ভগ্নস্তুপের ধূলাগুলি সারাদিন বেয়াদবের মতো ঘুরে বেড়ায়। আর রাতে এসে দেখি আমার টেবিলের ওপর সব ঘাঁটি গেড়েছে। ফু, লাঠি- লাত্থি, ঝাটা-কম্বল - যা দিয়ে পারি ওদের তাড়িয়ে বিদায় করি। ভাবি জানালাটা বন্ধ করে রাখব, কিন্তু সেক্ষেত্রে লোকসান আমারই। এত গরম পড়েছে। ঘরে একটু বাতাস না ঢুকলে, কেমন লাগে! কাঠফাটা রোদে কাঁঠালও পেকে যাচ্ছে, তাই বলে আমার মাথা ফাটে নি কিংবা অন্যকিছু, আমি বলতে চাই যে এত গরম সহ্য হয় না। বছরের অর্ধেকটা যদি শহরটা বরফে ধাকা থাকতো, কী যে মজা হতো! এটা আলাদা বিষয়, তখন ঠান্ডাকে গালাগাল করে হা- হুতাশ করে মরতাম। তবে বরফ পড়লে হয়তো বা তখন আর জানালা খুলতে পারতাম না। একশ বছরের বেশি ধরে কত কি না সহ্য করেছে, এখন বরফ সইতে পারবে কি না, তা বোধ হয় কেবল জানালারই জানা আছে। আক্ষেপ হয়, জানালাও যদি কথা বলতো। দৃশ্যটা কেমন হতো তাই ভেবেই তো কুল পাই না। কোনো কিছু হওয়া-না হওয়ার পেছনেও কারণ আছে। জানালা যে কথা বলে না, এর মধ্যেও কারণ আছে। আসল কথা হলো, সেই কারণের খোঁজ আমি কখনও রাখি নি, আগামীতেও রাখব না। কারণ, ভবিষ্যতে এই জানালাটাই থাকবে না। এর কারণ? ওই যে, উন্নয়ন। ভালো ও খারাপ, সহোদর তো বটেই, বোধ করি তারা সহোধরও হবে। আশ্চর্য কাকে বলে, তা আমি ভুলতে বসেছি। এদিকে যখন আকাশের চাঁদটা একটু অতিরিক্ত সুন্দর লাগছে, রাস্তার পাশে ব্যাঙগুলো না জানি কোন ভাষায় কি বলছে, মাঝেমধ্যে মশকীরা এসেও চুমু দিয়ে যায়, মাঝরাত পেরিয়ে সেহরির সময়ও বুঝি এগিয়ে এলো, আর আমি একা বসে আছি বিছানাতে, হাতে খোলা কলমের নিচে রশিটানা খাতা আর সামনে পর্দাহীন নির্লজ্জের মতো খোলা রয়েছে জানালা।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment